প্রকাশিত: Wed, Jul 12, 2023 10:21 AM
আপডেট: Mon, Jun 30, 2025 2:03 PM

ভিসা নীতির ভালোমন্দ ও প্রতিক্রিয়া ভারতকেও ভাবাচ্ছে

মাহমুদ হাসান শিবলী: বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে উপলক্ষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে ভারতে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। চীন-রাশিয়া ইতোমধ্যে সরাসরি বিবৃতি দিয়েছে এবং বাংলাদেশের নির্বাচনে মার্কিন তৎপরতার কঠোর সমালোচনা করেছে। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত কী ভাবছে? কিছুটা কী অস্বস্তিতে আছে?  

(১) ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৌম্য বন্দোপাধ্যায়ের মতে, যেহেতু বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতের ঘনিষ্ঠতম নির্ভরযোগ্য বন্ধু, তাই এই ভিসা নীতির ভালোমন্দ ও প্রতিক্রিয়া ভারতকে ভাবাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত ঘিরে গড়ে ওঠা বিতর্ক ও সেই নিরিখে প্রতিবেশী বন্ধুদেশের সম্ভাব্য রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির ওপর ভারত তীক্ষè দৃষ্টি রেখেছে। 

(২) ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া না আসলেও নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটন বাংলাদেশ ইস্যুতে যোগাযোগ রাখছে বলে মনে করেন আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট ড. আলী রীয়াজ। তিনি সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ভারত এই মুহূর্তে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না। তবে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই, এমন মনে করা ঠিক নয়। বিশেষ করে আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি যা দাঁড়াবে, তাতে কোনো না কোনোভাবে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে এক ধরনের আলোচনা হবে। সেটা ২০১৩-১৪ সালের মতো প্রত্যক্ষভাবে হবে কিনা সেটাই বিষয়। সে সময় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা দিল্লিতে গিয়েছিলেন আলোচনার জন্য। এবার তেমন কিছু প্রকাশ্যে হবে না, যা হবে তা পর্দার অন্তরালেই হবে। সেরকম একটি সম্ভাবনার কথা সবাই বিবেচনায় রাখতে পারি।

(৩) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিকে কূটনৈতিক হাতিয়ার মনে করেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। তার মতে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে যারা এত চিন্তিত, তারা কেন পাকিস্তানকে নিয়ে নীরব? যেকোনো কারণেই হোক যুক্তরাষ্ট্রের মনে এমন একটা ধারণা সম্ভবত গেড়ে বসেছে যে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ভোট হলে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে। তাই তারা নতুন ভিসা নীতিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এই নীতি হয়ে উঠেছে কূটনৈতিক হাতিয়ার।

(৪) ঢাকায় নিযুক্ত আরেক সাবেক হাইকমিশনার দেব মুখোপাধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন,  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরেও কি অনেক অভিযোগ ওঠেনি? উঠেছে। এবং সেগুলো এখনো অমীমাংসিত। মার্কিনরা যা করে সব সময় তা নিরপেক্ষ, অবিতর্কিত ও পক্ষপাতহীন কি? প্রতি ক্ষেত্রে তারা কি এভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়, যেভাবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দিল?

(৫) আবার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি বাংলাদেশকে কি চীন বলয়ের দিকে ঠেলে দেবে কিনা এমন প্রশ্নও সামনে আসছে। সৌম্য বন্দোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রও কি চাইবে বাংলাদেশকে এতটা কোণঠাসা করতে, যাতে তাদের ওপর চীনের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায়? এদিকে ভারতের দৃষ্টি বিশেষভাবে নিবদ্ধ। ভারত নিশ্চিতভাবেই চায় না, যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু করুক, যাতে চীনকে নিয়ে সাউথ ব্লককে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হয়। সরকারিভাবে কেউ কবুল না করলেও জনপ্রিয় বিশ্বাস, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার শেষ ওয়াশিংটন সফরে এই নীতি নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র মতবিনিময় হয়েছে। সব কুল যাতে রক্ষা হয়, সে জন্য ভারত তার মতো চেষ্টা করে যাচ্ছে।

(৬) বাংলাদেশ পর্যবেক্ষক ও জিন্দাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত মনে করছেন, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এই চাপ রেখে যাবে। ভারতের ধারণাও মনে হয় তাই। তবে ভারত নিশ্চিত হতে চায়, চীন যাতে প্রয়োজনের বেশি গুরুত্ব না পায়। এই আখ্যানে চীনই ভারতের প্রধান উদ্বেগ।